• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

নির্বাচন

উৎসব উৎকণ্ঠার ভোট

  • ''
  • প্রকাশিত ০৮ মে ২০২৪

রেজাউল করিম হীরা:

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট আজ। এ ধাপে ১৪০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় নির্বাচনের মতো এ নির্বাচনও বর্জন করেছে বিএনপি। যদিও কিছু উপজেলায় বিএনপি নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। অপর দিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে মন্ত্রী-এমপিদের নিকটাত্মীয়রা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আছেন একাধিক দলীয় প্রার্থী। ফলে ভোট নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি আছে সহিংসতা শঙ্কাও।

নির্বাচনের প্রস্তিুতি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না। তবু কোনো মন্ত্রী ও এমপি (সংসদ সদস্য) ভোটে প্রভাব বিস্তার করেন কি না, তা কেন্দ্রীয়ভাবে নজরদারি করা হবে। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারে মন্ত্রীদের নিবৃত্ত করতে পেরেছে ইসি। তবে এখনও এলাকায় অনেকে আছেন। কেউ যাতে প্রভাব বিস্তার না করেন, তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে অনুপ্রবেশকারীরা যাতে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে রিটার্নিং অফিসারকে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। ইসি কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে সেটাই বড় কথা। কোন দল এলো কি এলো না, সেটা বড় কথা নয়। জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে এ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে। নির্বাচন যাতে প্রভাবিত না হয় সে ব্যাপারে কমিশন চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে সিইসি বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৭ জন সদস্য থাকবেন। স্পর্শকাতর কেন্দ্রে থাকবেন ১৯ জন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। নানা কারণে এখন ১৪০ উপজেলায় নির্বাচন হবে। ইভিএমে ভোট হবে ২২ উপজেলায়। ৫ উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচনে কাগজে-কলমে নৌকা এবং ধানের শীষ প্রতীক না থাকলেও দুই দলের প্রভাব রয়েছে। ভোট বর্জনের জন্য লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের বহিষ্কার করছে সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি। অপরদিকে নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। যদিও প্রতিটি উপজেলায় দলের একাধিক প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগই। ইতোমধ্যে একাধিক উপজেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া দলীয় নির্দেশনা অগ্রাহ্য করে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনরাও অনেক জায়গায় প্রার্থী হয়েছেন। এক্ষেত্রে ভোটের মাঠে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ মিলেছে। এ অবস্থায় ভোটে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে স্পিকার বরাবর চিঠিও দিয়েছে কমিশন।

প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ উপলক্ষে বিভিন্ন জেলায় নির্দিষ্ট হারের চেয়ে অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের চাহিদার কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নির্বাচনি এলাকার পরিধি, ভোটার সংখ্যা এবং ভোটকেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনায় বাড়তি এ চাহিদা নির্বাচন কমিশনে পাঠান জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)।

ইসির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, ভোটগ্রহণের দিন পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা এবং ভোটার ও প্রার্থীদের নিরাপত্তায় অন্তত ৩০ উপজেলায় বাড়তি ফোর্স মোতায়েনের চাহিদা পাঠিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সার্বিক বিষয় বিবেচনায় বাড়তি চাহিদা মেটাতে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল ১৪০ উপজেলার ১০ হাজার ৬০৫টি কেন্দ্রে নির্বাচনি সরঞ্জাম পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে আজ সকালে। নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে কাজ শুরু করেছে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি।

প্রথম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের ৮৩ হাজার সদস্য মাঠে নেমেছে। শুক্রবার পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে তারা দায়িত্ব পালন করবে। এর পাশাপাশি আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর (ভিডিপি) ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭৪ সদস্য কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে ২ হাজার ৮২০ জন সশস্ত্র আনসার ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর বাইরে আরও ২ হাজার ২৮৮ জন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত এসব বাহিনী। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এ ছাড়া গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব রোধে সাইবার নজরদারি শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থা।

এবারের নির্বাচনে ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে মাত্র চারটি দল চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দিয়েছে। প্রথম ধাপে জাতীয় পার্টি, জেপি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টিÑ এ চার দলের মোট আটজন দলীয় প্রতীকে প্রার্থী রয়েছেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাসের মাথায় সারাদেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে আইন সংশোধন করে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে এবার আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক দেয়নি। আর এ ভোট বর্জন করছে বিএনপি।

সাধারণ ছুটি : ভোট উপলক্ষে আজ সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। গত সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

একনজরে প্রথম ধাপের ভোট : আজ বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট হবে ১৪০ উপজেলায়। এর মধ্যে ২২ উপজেলায় ইভিএমে ভোট হবে। বাকিগুলো হবে ব্যালট পেপারে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ৭৩৫ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ৫৭০ জন, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ৬২৫ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৪৪০ জন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ২৮ জন (চেয়ারম্যান ৮ জন, সাধারণ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ১০ জন করে)। তিন পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ৫ উপজেলায়। সেগুলো হলো হাতিয়া, মুন্সীগঞ্জ সদর, বাগেরহাট সদর, পরশুরাম ও শিরবচর।

প্রথম ধাপে ভোটকেন্দ্র রয়েছে প্রায় ১২ হাজার ও ভোট কক্ষ ৭৮ হাজার এবং ভোটার প্রায় ৩ কোটি ১৪ লাখ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিটি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৭ জন ও গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ১৮-১৯ জন করে নিরাপত্তা সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। দুর্গম এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২০-২১ জন করে নিরাপত্তা সদস্য। প্রথম ধাপে ইতোমধ্যে নির্বাহী হাকিম নিয়োজিত রয়েছেন ১৫০ জন।

উল্লেখ্য, চার ধাপে ৪৮১ উপজেলায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথম ধাপে আজ ৮ মে, দ্বিতীয় ধাপে ১১ মে, তৃতীয় ধাপে ১৮ মে এবং চতুর্থ ধাপে ২৫ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে নির্বাচন উপযোগী ৪৮১টির ভোটের তালিকা প্রকাশ করেছে ইসি। এতে প্রথম ধাপে ১৫৩টি, দ্বিতীয় ধাপে ১৬৫টি, তৃতীয় ধাপে ১১১টি এবং শেষ ধাপে ৫২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads